এই ব্লগটি সন্ধান করুন

বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

গাজওয়াতুল হিন্দ


গাজওয়াতুল হিন্দ
 (উর্দুغزوة الهند‎‎) হচ্ছে ইসলামের সর্বশেষ নবি মুহাম্মাদের একটি ভবিষ্যদ্বাণী, যেখানে উল্লেখ আছে, ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হবে, যাতে মুসলমানদের বিজয় ঘটবে।[]

বেশ কিছু হাদিসে মুহাম্মাদ (স.) গাজওয়াতুল হিন্দের ভবিষ্যৎবাণী করেছেন।

সাহাবি সাওবান (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, মুহাম্মাদ (স.) ভারতের (তৎকালীন সময়ে "ভারত" বলতে পুরো অখণ্ড ভারত বা ভারতীয় উপমহাদেশকে বোঝানো হতো) কথা উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মতের দুটি দল, আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে জাহান্নাম হতে পরিত্রাণ দান করবেন, একদল যারা হিন্দুস্থানের জিহাদ করবে, আর একদল যারা ঈসা ইবন মারিয়াম (আঃ) এর সঙ্গে থাকবে।

এ বিষয়ে সাহাবি আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত কয়েকটি হাদিস রয়েছে। সেগুলো নিম্নে পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করা হলো :

১ম হাদিস

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে হিন্দুস্থানের জিহাদের আশ্বাস দিয়েছেন। আমি তা পেলে তাতে আমার জান মাল উৎসর্গ করব। আর যদি আমি নিহত হই, তবে মর্যাদাবান শহীদ বলে গণ্য হব। আর যদি ফিরে আসি, তা হলে আমি আবু হুরায়রা হব আযাদ বা জাহান্নাম হতে মুক্ত।

শায়খ আহমাদ মুহাম্মাদ শাকির তাঁর তাহকিককৃত ‘মুসনাদে আহমাদ’ এর টীকায় বলেন, হাদীসটির সনদ সহীহ।[৮] তিনি বলেন,

“হাদীসটির সনদ সহীহ। জাবর ইবনে আবীদাহ তাবেঈ, ছিকাহ (নির্ভরযোগ্য)। ইমাম বুখারী ‘আততারীখুল কাবীরে’ তাঁর জীবনী এনেছেন, তাতে কোনো জারহ উল্লেখ করেননি। ইমাম ইবনে আবি হাতেম তাঁর সংকলিত ‘আলজারহু ওয়াততা’দীলে’ জাবর ইবনে আবীদাহ সম্পর্কে জারহমূলক কোনো মন্তব্যই করেননি। ইবনে হিব্বান ‘কিতাবুছ ছিকাত’-এ তাঁর জীবনী আলোচনা করেছেন। অথচ যাহাবী ‘মীযানুল ই’তিদালে’ উল্লিখিত হাদীস বর্ণনার কারণে তার বিরুদ্ধে ‘মুনকার বর্ণনার’ অভিযোগ করেছেন এবং তাকে মাজহুল আখ্যায়িত করেছেন!! হাফেয ইবনে হাজার ‘তাহযীবুত তাহযীবে’ অনুরূপ কথা যাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন।”

তিনি আরও বলেন,

“আমার বুঝে আসে না, হাফেয যাহাবী কিসের ভিত্তিতে হাদীসটিকে মুনকার বলেছেন? যেখানে ইমাম বুখারী রহিমাহুল্লাহ বা তাঁর পূর্বের কোনো ইমাম এ হাদীসটিকে মুনকার বলেননি এবং এই তাবেঈকে কোনো ধরনের জারহ করেননি, সেখানে (যাহাবী কিংবা) পরবর্তী কারোর এমন অভিযোগ স্বেচ্ছাচারিতা বৈ কিছুই নয়।”

অপর একটি সনদে এই হাদিসকে হাসান হিসেবে পাওয়া যায়।[] কিন্তু শায়খ শুআইব আরনাঊত হাদিসটিকে যইফ বলেছেন।

২য় হাদিস

রাসূলুল্লাহ (স.) হিন্দুস্তানের যুদ্ধের আলোচনা প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘অবশ্যই তোমাদের একটি দল হিন্দুস্তানে যুদ্ধ করবে। আল্লাহ তাঁদের বিজয় দান করবেন। তাঁরা হিন্দুস্তানের রাজাদের শিকল দিয়ে বেঁধে টেনে আনবে। আল্লাহ তাআলা সেই মুজাহিদদের সকলকে ক্ষমা করে দেবেন। অতঃপর মুসলিমরা যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালামকে শামে পেয়ে যাবে।’ আবু হুরায়রাহ (রা.) বলেন, ‘আমি যদি গাজওয়াতুল হিন্দের সময় বেঁচে থাকি, তাহলে আমার সমস্ত সহায়-সম্পত্তি বিক্রি করে দেব এবং সেই যুদ্ধে শরীক হব। এরপর যখন আল্লাহ তা’আলা আমাদের বিজয় দান করবেন এবং আমরা যুদ্ধ থেকে ফিরে আসব, তখন আমি হব (জাহান্নামের আগুন হতে) মুক্তিপ্রাপ্ত আবু হুরাইরা, যে শামে গিয়ে ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম-এর সঙ্গে মিলিত হবে।’ [আবু হুরায়রাহ (রা.) বলেন, আমি তখন নবীজীকে বলেছিলাম,] ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার খুব আকাংখা যে, আমি ঈসা আলাইহিস সালাম-এর নিকটবর্তী হয়ে তাঁকে সংবাদ দেব যে, আমি আপনার সংশ্রবপ্রাপ্ত একজন সাহাবি।’ তিনি বলেন, এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুচকি মুচকি হাসতে লাগলেন এবং বললেন, সে (যুদ্ধ) তো অনেক দেরি! অনেক দেরি!”[১১][১২]

হাদিসটি যইফ, কারণ এতে عَنْ শব্দ দ্বারা বর্ণনা করা হয়েছে।[১৩]

হযরত কা’ব থেকে বর্ণিত, মুহাম্মাদ (স.) বলেন,

“বায়তুল মোকাদ্দাসের (জেরুসালেমের) একজন রাজা ভারতের দিকে সৈন্য প্রেরণ করবে এবং সেখানের যাবতীয় সম্পদ ছিনিয়ে নিবে। ঐ সময় ভারত বায়তুল মোকাদ্দাসের (জেরুসালেমের) একটি অংশ হয়ে যাবে। তখন তার সামনে ভারতের সৈন্য বাহিনী গ্রেফতার অবস্থায় পেশ করা হবে। প্রায় গোটা পৃথিবী তার শাসনের অধীনে থাকবে। ভারতে তাদের অবস্থান দাজ্জালের আবির্ভাব হওয়া পর্যন্ত থাকবে।”[১৪]

সনদটির বর্ণনাকারীগণ ছিকাহ বা নির্ভরযোগ্য। তবে সনদে বাহ্যত ইনকিতা বা রাবির বিচ্ছিন্নতা রয়েছে।[১৫]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন